এটা কি?
শিশুদের বাতরোগ একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেখানে গিড়াতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয়। প্রদাহের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ গিড়া ব্যাথা, ফুলে যাওয়া ও নড়া চড়া করতে না পারা। এখানে ইডিওপ্যাথিক অর্থ রোগের কারন অজানা। লাঁবহরষব বলতে এখানে ১৬ বৎসর বয়সের নীচের শিশুদের বোঝানো হচ্ছে।
দীর্ঘ মেয়াদী রোগ মানে কী ?
দীর্ঘ মেয়াদী রোগ তখনই বলা যায় যখন সঠিক চিকিৎসা সত্ত্বেও পুরোপুরি রোগ সেরে যায়না কিন্তু রোগের উপসর্গসমূহে ও পরীক্ষার ফলাফলে পরিবর্তন আসে।
শিশুটি কত দিন অসুস্থ থাকবে আগে থেকে সেই ধারনা করাটাও সম্ভব না।
এই রোগের প্রাদুর্ভাব কেমন ?
এই রোগ তুলনামূলক কম হয় এবং সাধারনত প্রতি হাজারে ১-২ জন শিশু আক্রান্ত হতে পারে।
এই রোগের কারণ কী কী?
আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস প্রভৃতির আক্রমন থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের শরীরের বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর উপাদানসমূহ চিহ্নিত করে ধবংস করতে সক্ষম।
দীর্ঘমেয়াদী বাত রোগে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোষ ও ভাল কোষসমূহ আলাদা করা যায় না। যার দরুন শরীরের নিজস্ব স্বাভাবিক কোস সমূহ আক্রান্ত হয়ে গিড়ার প্রদাহ হয়। যার অর্থ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজস্ব স্বাভাবিক কোষ সমূহের বিরুদ্ধেই প্রতিক্রিয়া করে।
তবে, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের মত এই রোগের ও সঠিক ব্যাখ্যা এখনও মূলত অনেকটাই অজানা।
ইহা কি বংশগত রোগ ?
সরাসরি মা বাবা থেকে সন্তানে সংক্রমিত হয়না বলে ঔওঅ বংশগত রোগ না। তবে কিছু জন্মগত (জেনেটিক) উপাদান (যা এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয় নি) এ রোগের জন্য দায়ী বলে ধারনা করা হয়। বিশেষষ্ণরা একমত যে কিছু বংশগত ও পরিবেশগত ব্যাপার থাকলে এরোগ হতে পারে। তবে বংশগত উপাদান থাকলেও একই পরিবারের দুই (জীবানু জনিত সংক্রমন) শিশুর এরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ইহা কিভাবে শনাক্ত হয়?
ঔওঅ সাধারনত গিড়ায় দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ থেকেই শনাক্ত করা যায়। তবে গুরুত্ব সহকারে রোগের ইতিহাস, রোগী পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরী পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গিড়ার অন্যান্য রোগ সমূহ পৃথক করা যায়।
ঔওঅ অবশ্যই ১৬ বছর বয়সের পূর্বে শুরু হতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ লক্ষনসমূহ থাকতে হবে। সেই সাথে অন্যান্য কারনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাদ দিতে হবে।
রোগের স্থায়ীত্ব ৬ সপ্তাহ সময় এ জন্য ধরা হয়েছে যে অন্যান্য যে সব কারনে স্বল্প স্থায়ী বাত রোগ হতে পারে (যেমন সংক্রমন জনিত প্রদাহ) সে গুলোকে আগে বাদ দিতে হবে। শিশুদের বাত রোগ বলতে (ঔওঅ) সব ধরনের দীর্ঘমেয়াদী বাত যার কোন কারন জানা যায়নি এবং যা শৈশবকালে শুরু হয় তাদেরকেই বোঝায় ।
ঔওঅ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। (নীচে উল্লেখ করা আছে)
এই রোগে গিড়ার ভেতরে কি হয়ে থাকে?
গিড়ার ভেতরে একটি পাতলা পর্দা বা আবরন থাকে (সাইনোসিয়াল মেমব্রেন)। এই পর্দ্দাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের কারনে পুরু হয়ে যায় এবং এই রোগের একটি বিশেষষ্ণত্ব হলোঃ অনেকক্ষন গিড়া নড়াচড়া না করলে শক্তভাবটা বেশী হয়। যেই কারনে শক্তভাব সকালবেলা বেশী অনুভব হয়। বিভিন্ন রকম কোষ ও তরল পদার্থ এর মধ্যে জমা হয়। এই কারনে গিড়া ফুলে যায়, ব্যথা হয়, নড়াচড়ায় সমস্যা হয় এবং গিড়া শক্ত হয়ে যায়।
বাচ্চারা সাধারনত গিড়া ভাজ করে রেখে গিড়া ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করে থাকে। গিড়া ভাজ করা এই অবস্থানকে এন্টালজিক অবস্থান বলে। যদি এই অবস্থা দীর্ঘদিন অর্থ্যাৎ সাধারনত ১ মাসের বেশী থাকে তাহলে মাংস পেশী ও রগসমূহ সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায় এবং গিড়া বাঁকা হয়ে শক্ত হয়ে যায়।
যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে গিড়ার প্রদাহ দুই ভাবে গিড়ার ক্ষতি করে। গিড়ার হাড় ও তরুনাস্থির ক্ষতি হয়ে ভিতরের পর্দ্দা পুরু হয়ে অসমান হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত গিড়ার বিভিন্ন রকমের অস্বাভাবিক নিঃস্বরনের কারনে এক্সরে করলে হাড়ের ভেতরে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদী এন্টালজিক (ভাজ অবস্থায়) অবস্থায় রাখলে মাংস পেশী শুকিয়ে ছোট হয়ে যায় এবং অবশেষে গিড়া পুরোপুরি বাকা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন থাকলে মাংস পেশী শুকিয়ে যায় তাতে গিরা পুরোপুরি সোজা বা ভাঁজ করা যায় না।