হাটু ব্যথা কম বেশী আমাদের সবারই হয়ে থাকে। একটু বিশ্রাম নিলে বা দুই একটা ব্যথার ওষুধ খেলে অনেক সময় এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু আর্থ্রাইটিস বা বাতজনিত হাটু ব্যথা সহজে সরতে চায় না।
১. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): অস্টিওআর্থ্রাইটিস জনিত হাটু ব্যথাই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এটা সাধারণত মধ্যবয়ষ্ক লোকজনের হয়ে থাকে। এটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে আর জয়েন্টের কার্টিলেজকে ভাঙ্গতে থাকে। আস্তে আস্তে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়। তখন হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়।
২. রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): এটা যে কোন বয়সে হতে পারে। এই আথ্রাইটিস হলে হাটু ব্যথার সাথে অন্যান্য জয়েন্টও ব্যথা হতে হয়। সকাল বেলায় জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যায়।
৩. ট্রমাটিক আর্থ্রাইটিস (Traumatic Arthritis) : সাধারণত হাঁটুতে কোন ধরণের আঘাত যেমন লিগামেন্ট ইনজুরি, মিনিসকাস (Meniscus) ইনজুরি, ফ্র্যাকচার, বা ডিজলোকেশন (Dislocation) হওয়ার এক বছর পরে এই ধরণের আর্থ্রাইটিস হতে পারে।
চের লক্ষণসমূহ দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার আথ্রাইটিস হয়েছে :
১. ব্যথা ( knee pain) : হাঁটুর চারদিকে বা একপাশে ব্যথা হতে পারে ।
২. হাঁটুতে চাপ বা ধরলেই ব্যথা অনুভূত হতে পারে (Tenderness)।
৩. হাটু ফুলে যেতে পারে (Swelling)।
৪. হাটু নড়াচড়ার সময় শব্দ হতে পারে (Crepitus Sound)।
৫. জয়েন্ট শক্ত হয়ে যেতে পারে (Stiffness)।
৬. প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত অনেক্ষণ বসে থাকার পর নড়াচড়া করার সময় ব্যথা হতে পারে কিংবা সিড়ি দিয়ে উঠাবসার সময় ব্যথা বেশী হতে পারে।
সবার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কোন ধরণের আর্থ্রাইটিস সেটা নির্ণয় করতে হবে। তারপর ভালভাবে সঠিক চিকিৎসা নিলেই হবে। আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে ব্যথার ঔষধে ব্যথা সাময়িক ব্যথা নিবারন হয় মাত্র, বরং আর্থ্রাইটিস আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
সঠিক ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি এই ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিস বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে ঔষধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি নিলে উপকার পাবেন ভালোভাবে।
আর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্টকে দেখিয়ে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ইলেকট্রো-ফিজিওথেরাপি (TENS, UST, SWD, IFT) তেমন গরুত্ব রাখে না।
ব্যথা বেশী থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ম্যানুয়্যাল থেরাপী (যেমন: Knee joint mobilization, Strengthening exercise, Joint gaping, Cycling ) বেশী ভাল কাজ করে।
আপনি নিজে চেষ্টা করেই আর্থ্রাইটিসকে প্রতিরোধ পারেন অনেকটা,,,, যেমন
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ান দেখিয়ে নিবেন।
২. নিয়মিত সঠিকভাবে ব্যায়াম করবেন। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্ট দেখিয়ে ব্যায়াম ঠিক করে নিবেন।
৩. আঘাত এড়িয়ে চলুন। খেলাধুলার সময় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সাপোর্ট (Knee Brace) ব্যবহার করবেন।
৪. জয়েন্টকে নিরাপদ রাখুন, সঠিকভাবে বসুন, সঠিকভাবে হাটাহাটি করুন, সঠিকভাবে কাজ করুন।
৫. মেয়েদের ক্ষেত্রে হাই হিল কম ব্যবহার করুন।
৬. ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে পূরণ করুন।
৭. কোন সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।